পর্যটন শিল্প রচনা ক্লাস ৬ থেকে ১০ পর্যন্ত সকল শ্রেণীর জন্য

 


ক্লাস ৬-৭ এর জন্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা

ভূমিকা

আমাদের দেশ বাংলাদেশ অনেক সুন্দর। এখানে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। মানুষ এসব জায়গায় ঘুরতে আসে। এই ঘোরাঘুরিকে পর্যটন বলে। আর পর্যটকদের সেবা করে যে ব্যবসা সেটাই পর্যটন শিল্প।

বাংলাদেশের পর্যটন স্থান

আমাদের দেশে অনেক পর্যটন স্থান আছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর সবচেয়ে বড়। সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার থাকে। সিলেটের চা বাগান খুব সুন্দর। রাঙামাটি, বান্দরবানের পাহাড় দেখতে খুব ভালো লাগে।

পর্যটনের উপকার

পর্যটন থেকে আমাদের দেশের অনেক লাভ হয়। বিদেশি পর্যটকরা এসে টাকা খরচ করে। এতে দেশ টাকা পায়। অনেক মানুষের কাজ হয়। হোটেল, রেস্তোরাঁ, গাড়ির মালিকরা লাভ করে।

সমস্যা

আমাদের পর্যটন শিল্পে কিছু সমস্যা আছে। রাস্তাঘাট ভালো নয়। হোটেল কম। নিরাপত্তার সমস্যা আছে। পরিবেশ নষ্ট হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অনেক সম্ভাবনা আছে। সরকার আর আমরা সবাই মিলে এই শিল্পের উন্নতি করতে পারি। তাহলে আমাদের দেশ আরো সুন্দর হবে আর অনেক বেশি পর্যটক আসবে।


ক্লাস ৮ এর জন্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা

ভূমিকা

পর্যটন শিল্প আধুনিক বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস আর সংস্কৃতির বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। এসব সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র

বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণ বিভিন্ন ধরনের। কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর অসংখ্য পাখি দেখা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, ঝরনা আর উপজাতীয় সংস্কৃতি মনোমুগ্ধকর। সিলেটের হাওর, চা বাগান অপরূপ। ঢাকার লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল ইতিহাসের সাক্ষী।

পর্যটনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পর্যটন শিল্প বিদেশি মুদ্রা আয়ের উৎস। এই খাতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, গাইড সার্ভিস সব মিলে একটা বড় শিল্প গড়ে উঠেছে। স্থানীয় হস্তশিল্প, খাবার বিক্রি হয়।

চ্যালেঞ্জসমূহ

পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা, মানসম্মত আবাসনের অভাব, নিরাপত্তা সমস্যা প্রধান বাধা। পরিবেশ দূষণ, অপরিকল্পিত উন্নয়নও সমস্যা সৃষ্টি করে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

সঠিক পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

উপসংহার

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প একটি উদীয়মান খাত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এই শিল্পকে দেশের অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।


ক্লাস ৯ এর জন্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা

ভূমিকা

একবিংশ শতাব্দীতে পর্যটন শিল্প বিশ্বব্যাপী অন্যতম বৃহত্তম সেবা খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পর্যটন শিল্পের জন্য এক অপার সম্ভাবনার দেশ। তবে এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের পর্যটন সম্পদ

বাংলাদেশের পর্যটন সম্পদ বহুমুখী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন সমুদ্র উপকূল, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন আর বন্যপ্রাণী, সিলেটের হাওর-বিল আর চা বাগান, পার্বত্য এলাকার পাহাড়-ঝরনা অনন্য। ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে পাহাড়পুর বিহার, মহাস্থানগড়, ময়নামতি, বাগেরহাটের মসজিদ নগরী। ধর্মীয় পর্যটনে রয়েছে বায়তুল মোকাররম, ষাট গম্বুজ মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির।

পর্যটনের অর্থনৈতিক প্রভাব

পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রায় ৪.৪% অবদান রাখে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিদেশি পর্যটক আগমনে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে কুটির শিল্প, কৃষিপণ্য, মৎস্য খাতের বিকাশ ঘটে।

পর্যটন শিল্পের সমস্যাবলী

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের প্রধান সমস্যা অবকাঠামোগত দুর্বলতা। যোগাযোগ ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা, মানসম্পন্ন হোটেল-মোটেলের অভাব, দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। পর্যটন স্থানগুলোর নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যায় না। অপর্যাপ্ত প্রচারণার কারণে বিদেশে তেমন পরিচিতি নেই।

সরকারি উদ্যোগ ও নীতিমালা

সরকার জাতীয় পর্যটন নীতি প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করে উন্নয়ন কাজ চালানো হচ্ছে। বিদেশে প্রচারণা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও করণীয়

পরিকল্পিত উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নতি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা, টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। বিশেষভাবে ইকো-ট্যুরিজম, কালচারাল ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের বিকাশ ঘটানো যেতে পারে।

উপসংহার

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। সঠিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন আর সকলের সহযোগিতায় এই খাতটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।


ক্লাস ১০ এর জন্য বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা

ভূমিকা

আধুনিক যুগে পর্যটন শিল্প একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ১০% পর্যটন খাত থেকে আসে। বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির কারণে পর্যটন শিল্পের জন্য এক বিপুল সম্ভাবনার অধিকারী। তবে এই সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি বিভিন্ন কাঠামোগত ও নীতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে।

বাংলাদেশের পর্যটন সম্পদের বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের পর্যটন সম্পদকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রাকৃতিক পর্যটনে রয়েছে কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত যা বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৈকত। সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্য। সিলেটের হাওর অঞ্চল, চা বাগান, রাতারগুল জলাবন অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। পার্বত্য চট্টগ্রামের নীলগিরি, নীলাচল, বান্দরবানের স্বর্ণ মন্দির, রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু পাহাড়ি পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয়।

ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনে রয়েছে নওগাঁর পাহাড়পুর বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার ময়নামতি, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির। ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও অবদান

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অবদান ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই খাত জিডিপিতে প্রায় ৪.৪% অবদান রাখে এবং মোট রপ্তানি আয়ের ৩.৯% আসে পর্যটন থেকে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১৫ লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরো ২২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন, গাইড সার্ভিস, হস্তশিল্প, স্যুভেনির তৈরিসহ বহু সহায়ক শিল্প গড়ে উঠেছে।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি বছর প্রায় ৫-৬ লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসেন যারা গড়ে প্রায় ৭৫০-৮০০ ডলার খরচ করেন। এছাড়া অভ্যন্তরীণ পর্যটনও ব্যাপক।

পর্যটন শিল্পের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে বিভিন্ন কাঠামোগত ও নীতিগত সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, অবকাঠামোগত দুর্বলতা একটি প্রধান সমস্যা। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা, সড়ক নেটওয়ার্ক, বিমানবন্দর সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। দ্বিতীয়ত, আবাসন সংকট রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-রিসোর্টের সংখ্যা কম এবং যা আছে তার মূল্য বেশি।

দক্ষ জনবল সংকট আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। পর্যটন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যটকদের আকর্ষণে বাধা। পরিবেশ দূষণ ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক পর্যটন স্থানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণার অপর্যাপ্ততার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি কম।

সরকারি নীতিমালা ও উদ্যোগ

বাংলাদেশ সরকার পর্যটন শিল্প উন্নয়নে বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। ২০১০ সালে জাতীয় পর্যটন নীতি প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড পুনর্গঠন করে এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে সেখানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।

'ভিজিট বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রচারাভিযান শুরু করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য ভিসা নীতি সহজীকরণ, অন-অ্যারাইভাল ভিসার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পর্যটন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।

টেকসই পর্যটন উন্নয়নের দিকনির্দেশনা

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইকো-ট্যুরিজমের বিকাশ ঘটাতে হবে। কমিউনিটি বেসড ট্যুরিজম চালু করে স্থানীয় জনগণের সরাসরি উপকার নিশ্চিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক পর্যটনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রচার করতে হবে।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন বুকিং সিস্টেম চালু করতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় পর্যটন সার্কিটের অংশ হতে হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প একটি উদীয়মান খাত যার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের এক অনন্য সমন্বয় বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য করে তুলতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, মানসম্পন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা। যদি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তবে পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ইমেজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url